আলোকিত মানুষ গড়ার প্রচেষ্টায় …..

প্রথমেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে কলিমাতুশ্ শুকর আলহামদু লিল্লাহ পড়ছি যার অপার অনুগ্রহে আমরা সৃষ্টির সেরা হয়েছি। যার অনন্ত করুণায় আমরা মুসলমান হয়েছি এবং যার অসীম অনকম্পায় আমরা হেদায়েতের আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছি। সালাত ওসালামের হাদিয়া পেশ করছি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি, যিনি বিশ্ব-মানবের সামগ্রিক কল্যাণের জন্যে শুভাগমন করেছেন পৃথিবীর আঙ্গিনায়, যার দস্তে মোবারকে হাত দিয়ে সাহাবায়ে কেরাম হয়েছেন সোঁনার মানুষে পরিণত এবং যার শুভ পদার্পণে গোটা দুনিয়া হয়েছে আলোকিত।
রাত্রি বেলায় আকাশে কত অসংখ্য নক্ষত্র শোভা পায়, কত অগণিত তারকা মাথার উপরে পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু তার পরেও অন্ধকারকে পুরোপুরি ভাবে দূরীভূত করার জন্যে পৃথিবী অপেক্ষা করে সূর্যের। ব্যাপারটি কি আসলেই এমন নয়? নিশ্চয়ই, নিঃসন্দেহে। ঠিক তেমনি হেদায়েতের আসমানে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে আরম্ভ করে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত কত নবী আবির্ভূত হয়েছেন এবং কত রাসূল আত্নপ্রকাশ করেছেন কিন্তু তার পরেও পথভ্রষ্টতার অন্ধকারকে একেবারে বিদায় দেয়ার জন্যে এবং বর্বরতা, নির্মমতা ও নির্দয়তার চির অরসানের জন্যে বিশ্ব এক প্রদীপ্ত সূর্যের অপেক্ষা করছিল, সেই প্রদীপ্ত সূর্য হলেন সর্বশেষ নবী শ্রেষ্ঠ নবী, প্রিয় নবী হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
কোরআন ও হাদীসের ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর ফরজ। আর এই ফরজ কাজটি সম্পাদন করার সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট স্থান হল কওমী মাদ্রাসা। এ সকল মাদ্রাসা হতে হাজার হাজার আলেম বের হচ্ছে প্রতি বৎসরে, অগণিত হাফেজে কোরআন তৈরি হচ্ছে নিয়মিত এ সব কারখানা থেকে, তৈরি হচ্ছে অসংখ্য বক্তা, লেখক ও মুবাল্লিগ। যাদের অধিকাংশই পরবর্তীতে কোন না কোন ভাবে দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে আত্ননিয়োগ করে যাচ্ছে এবং কোন না কোন ভাবে তারা ইসলামের খিদমত আঞ্জাম দিয়ে যচ্ছে।
১৮৬৬ ঈসায়ী সালে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী ইলমী মারকায, ওলামায়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ছহীহ আকায়েদের ধারক-বাহক দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। দারুল উলূমের শাখা হিসেবে ১৯০১ ঈসায়ী সালে বাংলার সুপ্রসিদ্ধ দ্বীনি এদারা দারুল উলূম মুইনুল ইসলাম (হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে ইলমে নববীর শিক্ষার সম্প্রসারণ শুরু হয়। স্বল্প সময়েই এদেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠতে থাকে বহু মাদ্রাসা। চট্টগ্রাম পটিয়া, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, বগুড়া বরিশাল, মোমেনশাহী, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন ৮নং নাটাই উত্তর ইউনিয়ন অন্তর্গত ভাটপাড়া গ্রামে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। ১৯৭০ ঈসায়ী সনে “ জামিয়া ইসলামিয়া দারুসসালাম ভাটপাড় ” এমনি-ই একটি খালেছ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের নাম, যা দারুল উলূম দেওবন্দের আদর্শ ও মতবাদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আবহমান বংলার পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রন্তে, দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উত্তর প্রান্ত যাতায়াত করতে রেলপথ ধরে চলুন, আর সড়ক পথে চলুন, কিংবা পানি পথই ব্যবহার করুন; পথিমধ্যে “ ভাটপাড়া ” নামক একটি স্থান আপনাকে অবশ্যই স্বাগত জানাবে। এবং অত্র অঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য কওমি, হাফেজিয়া ও মহিলা মাদ্রাসা। দেশ-বিদেশের বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম, মুফতীয়ানে এ’জাম, মুহাদ্দিসীনে কেরাম, মুফাচ্ছেরীনে কেরাম ও প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদগণসহ কত ওলী-আওলিয়া, পীর-বুযূর্গদের পদধূলিতে ধন্য হয়েছে ও হচ্ছে এখানকার জমিন, তার হিসাব বাখার সধ্য কার! ওলী-আওলিয়া ও বুযুর্গানে দ্বীনের গায়ের ধূলো-বালিগুলো উড়ে উড়ে স্থান দখল করেই হয় তো এখানে গড়ে উঠেছে মানুষের মত মানুষ, সোঁনার মানুষ, আলোকিত মানুষ গড়ার কারকানা ও ফুলে-ফলে সু-সজ্জিত অসংখ্য নববী কানন তথা বহু দ্বীনি প্রতিষ্ঠান এবং আল্লাহ ওয়ালা বানানোর ফ্যাক্টরী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন ৮নং নাটাই উত্তর ইউনিয়ন অন্তর্গত ভাটপাড়া গ্রামটি যেন ইমে নববীর আদর্শেই আদর্শবান। দ্বীনের হেফাজত, প্রচার-প্রসার, সর্বোপরি- ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দ্বীনে মুহাম্মদীকে সু-প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ভাটপাড়া গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ গড়ে তুলেছে তাদের এ প্রিয় জন্মস্থান গ্রামটিতে অসংখ্য মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা, মহিলা মাদ্রাসা। পাশাপাশি পার্থিব উন্নতির জন্য স্কুল, মাধ্যমিক স্কুলসহ বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।
ভাটপাড়া গ্রামের সকল অধিবাসীই ধর্ম প্রাণ, খোদাভীরু, আলেম-পীরভক্ত এবং দ্বীনের খালেচ মুবাল্লিগও বটে। আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র, তাবলীগী মুসাফির সকলেই যেন তাদের একান্ত আপনজন। ভাটপাড়া ও তৎপার্শ্ববর্তী এলাকাবাসীর আর্থিক ও ছাত্রদের লজিং রাখার সাহায্যে পরিচালিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী “জামিয়া ইসলামিয়া দারুসসালাম ভাটপাড়া” মাদ্রাসাটি। জামিয়া প্রতিষ্ঠার মতো স্মরণীয় সদকায়ে জারিয়ার কাজ আঞ্জাম দিয়েছিলেন জগতজুড়ে আলোকিত এ মনীষার নাম “মাও. আব্দুস সালাম রহ.”। পাহাড়পুরের অলিকুল শীরমণির পরিবারে জন্ম যার। তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর এ অজাপাড়া গাঁয়ের বেনামাজী মানুষগুলোর পেছনে মেহনত করে অধিকাংশকে নামাজীদের কাতারে শামিল করেন। বিখ্যাত দুটি গ্রামের ইমাম হওয়ায় তাঁকে অনেকেই তাদের গৃহে দাওয়াত করে খাওয়াতে পারলে নিজেদের ধন্য মনে করতো। ইবাদাত গুজার এ বান্দা যে কোন বে-নামাজীর ঘরে মেহমান হতেন না। তাই তারা পুরো ১ সপ্তাহ তাঁর মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করার পর তাঁকে তাদের বাড়ীতে নিমন্ত্রণ জানাতে সাহস করতো।
চলতি বৎসরে (২০২১ ইং সনে) জামিয়া ইসলামিয়া দারুসসালাম ভাটপাড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র ৫০ সালা দস্তারবন্দী উপলক্ষে আন্তর্জাতিক ইসলামী মহা সম্মেলন হতে যাচ্ছিল । কিন্ত বিশ্ববেপী মরন বেধি মহামারি (কোভিট 19) এর কারনে দেশ লকডাউন থাকাই। আন্তর্জাতিক ইসলামী মহা সম্মেলন হয়নি। ইনশাআল্লাহ অচিরেই যেন অত্র জামিয়া ৫০ সালা দস্তরবন্দী সম্মেলন করা যায় মহান আল্লাহ তা’আলা কাছে দোয়া প্রাথানা করচ্ছি । আমীন ছুম্মা আমীন।

  • প্রতিষ্ঠানের নাম – জামিয়া ইসলামিয়া দারুসসালাম ভাটপাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাংলাদেশ
  • প্রতিষ্ঠানের অবস্থান: – ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন ৮নং নাটাই উত্তর ইউনিয়ন অন্তর্গত ভাটপাড়া গ্রামে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত।
  • প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম – জগতজুড়ে আলোকিত এ মনীষার নাম “মাও. আব্দুস সালাম রহ.”। পাহাড়পুরের অলিকুল শীরমণির পরিবারে জন্ম যার।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – ১৯৭০ ঈসায়ী
  • প্রতিষ্ঠানের আয়তন – ৬০,০০০ বর্গ ফুট।
  • কক্ষ সংখ্যা – ২২ টি (পুরাতন দুতলা ভবন ১৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থ)
  • কক্ষ সংখ্যা – ২৪টি (পাঁচ তলা নির্মাণাধীন নতুন ভবন ১৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থ , আলহামদুলিল্লাহ তিন তলা সম্পন্ন )
  • জামেয়ার শিক্ষাস্তর – মক্তব থেকে ফজিলত ২য় বর্ষ (স্নাতক ডিগ্রি) পর্যন্ত রয়েছে। কিতাব বিভাগে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা, অংক, ও ইংরেজি বাধ্যতা মূলত পাঠদান হচ্ছে।

জামিয়ার মৌলিক বিষয় বস্তু ২ টি

  • শিক্ষা বিভাগ
  • অর্থ বিভাগ

শিক্ষা বিভাগ

শিক্ষা বিভাগটির কার্যক্রম দুই ভাবে পরিচালিত হয়।

  • জামিয়ার শিক্ষা প্রকল্প
  • জামিয়ার প্রশিক্ষণ কর্মসূচী

জামিয়ার ক্লাসভিত্তিক পাঠদান

দারুল উলুম দেওবন্দের সিলেবাসের আলোকে তথা বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক প্রণিত সিলেবাসে পাঠদান। আর এই প্রকল্পটি ৩ ভাগে বিভক্ত :- ১। আদশ নূরাণী বিভা, ২। হিফজ বিভাগ ও ৩. কিতাব বিভাগ।

 

জামিয়ার প্রশিক্ষণ কর্মসূচী

ধর্ম-বর্ণ ও সমাজের সকল স্তরে জামিয়ার সন্তানরা যাতে ভূমিকা রাখতে পারে, সে জন্য রয়েছে নানামুখী আয়োজন। তাদের দক্ষ পরিচালনায় সম্পন্ন হয় নিম্নোক্ত আয়োজনসমূহ :

অর্থ বিভাগ:-

জামিয়ার অর্থ বিভাগ: ৪ টি ফান্ডের সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে ।

  • সাধারণ ফান্ড :-
  • গরীব ফান্ড :-
  • কিতাব ফান্ড :-
  • মসজিদ ফান্ড :-

বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের আগমন

রাসূল সা. এর জীবদ্দশায় আরবদেশসমূহে ইসলামের চিরন্তন রানী ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর সাহাবায়ে কিরাম তাবেইনহনের সক্রিয় প্রচেষ্টা এবং অক্লান্ত শ্রম-সাধনার ফলে প্রথম যুগেই ইসলাম পশ্চিমে মরক্কো, স্পেন, পর্তুগাল, পূর্বে সুদূর চীন, পূর্ব-দক্ষিণে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ জাভা, সুমাত্রা, বোর্নিও তথা সমগ্র মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মালদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। এসময় আরব বণিকদের মাধ্যমে বাংলার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে ইসলামের অমিয়বাণী প্রবেশ করে বলে ঐতিহাসিকগন মনে করেন। সম্ভবত এ সময়ই বাংলাদেশে হাদীসের আলো জ্বলেছিল। ঐতিহাসিক বর্ণনা দ্বার জানা যায় যে, খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে হযরত ওমর রা. এর শাসনামলে কয়েকজন ধর্মপ্রচারক হযরত মামুন ও হযরত মুহাইমিন এদেশে আগমন করেছিলেন। দ্বিতীয় বার হযরত হামেদুদ্দীন, মুর্তাজা, আব্দুল্লাহ ও আবু তালেব রাহ. ইসলামের প্রচার অভিযানে এ দেশে অগমন করেন। প্রত্মতাত্ত্বিক খনন কার্যে খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর খলীফর নামাস্কিত মোহর পাওয়া যাওয়ায গবেষকগন মনে করেন যে, সে সময় হয়ত এদেশে মুসলিম বণিকদের সমাগম হয়েছিল। ৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে হযরত বাইজিদ বোস্তামী চট্টগ্রামে, ১০৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান মাহমুদ মাহীসাওয়ার বগুড়ার মহাস্থানগড়ে, ১০৫৩ খ্রিষ্টাব্দে শাহ মুহম্মদ সুলতান রুমী ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোনা এলাকায় ইসলম প্রচারের উদ্দেশ্যে আগমন করেন। খ্রিষ্টীয় এয়োদশ শতাব্দীতে বল্লাল সেনের শাসনামলে বাবা আমম শহীদ রহ. এদেশে ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন। এ শতাব্দীতে ফরীদ উদ্দিন গাঞ্জে শকর (১১৭৭-১২৬৯ ইং) চট্টগ্রামে, হযরত শাহ মাখদুম রূপোস (১১৮৪ইং) রাজশাহীতে ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচার করেন।

এয়োদশ শতাব্দী

এসময় হযরত মাখদুম শাহ মাহমুদ গজনবী তাঁর ১৭ জন সহচরসহ পশ্চিমবঙ্গ ও মোঙ্গলকোটে, শাহ তুরকান শহীদ বগুড়ায়, শাহ তাকীউদ্দিন আরাবী রাজশাহী জেলার মহীসন্তয় এলাকায় সর্বপ্রথম মাদ্রাস স্থাপন করেছিলেন বলে ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়। আর সে সময় যেহেতু কোন বিশেষ ধরনের শিক্ষাদারা প্রচলিত ছিলনা, তাই একথা বলা অসঙ্গত নয় যে, সে সব মাদ্রাসা সমূহে কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক শিক্ষই চালু ছিল। এবপর ১২০৩ খ্রিষ্টীব্দে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী কর্তৃক বঙ্গ বিজয়ের পর এদেশে বহু মসজিদ-মাদ্রাসা স্থাপিত হয় এবং কুরআন ও হাদীসের তালীমের ব্যাপকতা শুরু হয়।
১২৭০ খ্রিষ্টাব্দে তুঘলকীয় শাসনামলে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শায়েখ শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা তৎকালীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে আগমন করেন এবং উচ্চমানের একটি মাদ্রাসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।

চতুর্দশ শতাব্দী

১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে হযরত শাহজালাল রহ. তাঁর ৩৬০ জন সহচরসহ পূর্ববঙ্গে ইসলাম ও ইলমে দ্বীনের প্রচারে অগমন করেন। এ শতাব্দীর অন্যান্য ধর্মপ্রচারকগণ হলেন, সাইয়্যিদ আহমদ কল্লা শহীদ কুমিল্লা, নোয়াখালী অঞ্চলে প্রখ্যাত আলিম মাওলানা আতা, দিনাজপুর শেখ আখি সিরজুদ্দীন তৎকালীন বাংলার কেন্দ্রস্থাল গৌড় ও পান্ডুয়ায়, শাহ বদরুদ্দীন চট্টগ্রাম, সাঈদ রিজা ইয়ামানী উত্তরবঙ্গে, হযরত রাসতি শাহ কুমিল্লায়; এছাড়া আরো বহু উলামায়ে কেরাম এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্ম প্রচারের কাজ করেন।

পঞ্চদশ শতাব্দী

এ শতাব্দীতে খাঁনা জাহান আলী ও তার সুযোগ্য শিষ্যগন যশোর, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। এতদ্ব্যাতীত শেখ জনুরুদ্দীন বাগদাদী, চিচিল শাহ গাজী, শেখ হুসামুদ্দীন মাণিপুরী ও বদরে আলম শহিদী এ শতাব্দীর খ্যতিমান ধর্মপ্রচারক।

ষষ্ঠদশ- উনবিংশ শতাব্দী

এ সময় শাহ মোয়াজ্জাম দানেশমান্দ রাজশাহী এলাকায়, শাহ জামালুদ্দীন জামালপুরে, খাজা শরফদ্দীন ওরফে খাজা চিশতী বেহেশতী ঢাকায় ইসলাম প্রচারে প্রত ছিলেন। উল্লেখ্য যে, এ সময় সম্রাট শেরশাহে এদেশে ইসলাম প্রচারে যথেষ্ট সাহায্য-সহযোগিতা করেন। পরবর্তীতে হাজী মুহসিন উদ্দিন, সাইয়্যিদ নিসার আলী তিতুমীর, হাজী শরয়িতুল্লাহ, পীর, দুদু মিয়া ও কেরামত আলী জৌনপুরী প্রমুখ উলামায়ে কেরাম বিদ’আত ও কুসংস্কারের মূলোৎপাটন করে এদেশে বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে বিপুল অবদান রাখেন।
যুগে যুগে উলামায়ে কেরামের অব্যাহত প্রচেষ্টায় ইসলামের শাশ্বতবাণী এদেশে প্রবেশ প্রবেশ করে ও তৎসঙ্গে কুরআন ও হাদিসের শিক্ষার প্রসার ঘটে। ফলে বর্তমানে প্রায় সহস্রাধিক মাদ্রসায় হাদীসের চর্চা ও গবেষণার কাজ চলছে।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ইলমের হাদীসের চর্চা

প্রচীন কালের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক। শিক্ষাবিদরা যেখারে আগমন করতেন সেখানেই গড়ে উঠত সুবিশাল শিক্ষাকেন্দ্র। তাই হযরত ওমর রা. এর যুগ থেকে শুরু করে যে সকল মহামনীষী এদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য আগমন করেন এবং বিভিন্ন স্থানে মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণ করেন, তারা এদেশে হাদীসের চর্চা করেননি একথা খোরাসান থেকে আগত পীর আওলিয়া কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা প্রচারই ছিল তাদের মুল মিশন।
বর্তমানে রংপুর প্রত্মতাত্ত্বিক গবেষণায় হিজরী তৃতীয় শতকের শেষের দিকে নির্মিত একটি বিরাট মসজিদ ও তৎসংলগ্ন ইমারতের ধ্বংসাবশেষে পাওয়া গেছে । গবেষকগণ অনুমান করেচেন যে, সম্ভবত এখনে বিরাট আকারের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল, যাতে বহু ছাত্র লেখাপড়া করত। তাছাড়া উপকূলীয় অঞ্চল সমূহে আরব বণিকগণ নিজেদের বসতি গড়ে তুলে ছিলেন; সে বসতিসমূহে তারা নিজেদের প্রয়োজনে মসজিদ গড়ে তুলে ছিলেন। সে সব মসজিদগুলোত ব্যাপক হারে ধর্মীয় শিক্ষার চর্চা হত। চারমত হিজরীর দিকে আগত পর্যটক ইবনে হাওকাল মসজিদ ভিত্তিক এই শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যপকতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে লিখেছেন- ‘যে কোন মসজিদে গেলেই ছাত্রদের শোরগোল শোনা যেত এবং দলে ছাত্রদের আনাগোনা পরিলক্ষিত হত’। বলা যায় যে, তখন থেকেই স্বল্প পরিসরে হলেও এদেশে হাদীস চর্চা শুরু হয়। তবে খ্রিষ্টীয় এয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে তুঘলক শসনামলে বিশিষ্ট হাদীসবেত্তা শায়েখ শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা দিল্লী থেকে ঢাকার সোনারগাঁয়ে আগমন করেন। তাকে কেন্দ্র করেই সেখানে জ্ঞান-পিপাসু বহু শিক্ষার্থীর সমাগম শুরু হয়। ফলে সোনারগাঁও ইসলামী শিক্ষা ও হাদীসচর্চার অন্যতম কেন্দ্র হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। শায়েখ শারফুদ্দীন আবু তাওয়ামা জীবনের শেষাবদি সেখানে হাদীস, তাফসীর ইত্যাকার ইলম ও মা’রিফাতের আলো বিতরণে রত ছিলেন।
সোনারগাঁয়ের এই হাদীস চর্চার কেন্দ্র বহু কীর্তিমান বিদগ্ধ হাদীস বিশারদদের জন্ম দিয়েছে। তন্মধ্যে শায়খ ইয়াহইয়া মুনিরীর মুনিরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি এখানে বসে বুকারী, মুসলিম, জামেউস-সগীর, মুসনাদে আবু ইয়ালা, মাশারিকুল অনওয়ার সহ বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থ অধ্যাপানা করেছিলেন।

 

কেন আমাদের জামিয়াকে নির্বাচন করবেন?

“জামিয়া ইসলামিয়া দারুস্সালম ভাটপাড়া”গতানুগতিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম নয়। সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে জামিয়া সাজিয়েছে তার পাঠনদান পদ্ধতি। শিশু শ্রেণী থেকে শুরু করে সবোর্চ্চ ফজিলত ২য় বর্ষ (স্নাতক ডিগ্রি), হাদিস, তাফসীর, উলূমুল হাদীস, ইসলামের ইতিহাস, আরবী ও বাংলা সাহিত্য সহ বিভিন্নিমূখী পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন করে চতুর্মূখী যোগ্যতাসম্পন্ন বিচক্ষণ আলেমে দ্বীন জতিকে উপহার দেওয়ার সুখ্যাতি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে গেছে। সুবিন্যস্ত সিলেবাসের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে মৌলিকভাবে কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, তাফসীর , উসূল, আকায়িদ, বৈষয়িক পর্যায়ে আরবী সাহিত্য , বাংলা সাহিত্য, ব্যাকরণ , নাহু , সরফ , বালাগাত সহ বাংলা, ইংরেজী, গণিত , ইতিহাস ,ইতিহাস, ভূগোল দর্শন ইত্যাদি সমূদয় বিষয়ে প্রয়োজন পরিমানে শিক্ষা দেয়া হয়। শিক্ষার পাশাপাশি জনসমাজে ইসলামী শিক্ষার সুফল পৌঁছে দেয়ার মহান লক্ষ্যে জামিয়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে থাকে। সব মিলিয়ে “জামিয়া ইসলামিয়া দারুস্সালম ভাটপাড়া” বহু বিভাগ সমন্বিত একটি মহা প্রকল্প।

  • রুটিন মাফিক পাঠদানের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক শিক্ষার্থীদের তদারকির ব্যবস্থা ।
  • ইলমী প্রাজ্ঞতা অর্জনের সাথে সাথে আত্মিক-শুদ্ধায়নের জন্য সাপ্তাহিক তরবিয়তী জলসার ব্যবস্থা।
  • তালিমের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তরবিয়তের সমান গুরুত্বসহ ইসলামী আদর্শের বাস্তবমূখী অনুশীলনের ব্যবস্থা।
  • সর্বোচ্চ তিন বছরে সম্পূর্ণ কুরআন হিফজের ব্যবস্থা
  • কুরাআন-হাদীস চর্চার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বাংলা, অংক ও ইংরেজী বিষয়ে পাঠদান।
  • এতিম, গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি‘র ব্যবস্থা।
  • অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের মনোযোগী হিসেবে গড়ে তোলার বিশেষ ব্যবস্থা।
  • অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে অভিভাবকদের প্রয়োজনী পরামর্শ গ্রহণ।
  • সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎও জেনারেটরের ব্যবস্থা ও খাবারের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা ।
  • স্বাস্থ্যসম্মত নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে নিজস্ব ক্যাম্পাসে আবাসন ব্যবস্থা।
  • সাপ্তাহিক নির্দেশিকায় প্রতিদিন তিনবেলা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ব্যবস্থা

ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা এবং মুক্তির জন্য ছেলে মেয়েদেরকে জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি ইলমে দ্বীনী-শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা প্রতিটি মুসলমান নর-নারী‘র দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর মুসলমান হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সফলতাই একজন মুসলমানের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ইরশাদ হচ্ছে- “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী‘র জন্য প্রয়োজনীয় দ্বীনি শিক্ষায় জ্ঞান অর্জন করা ফরজ”। কিন্তু সম্পতিক সময়ে আমাদের দেশের জাগতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ)গুলোর শিক্ষার্থীরা বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। তবে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সামাজিক উন্নয়নে জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনও কম নয়। তাই দ্বীনি-শিক্ষা ও জাগতিক শিক্ষার সু-সমন্বয় সাধন করা খুবই জরুরী। সমাজের এ মহান প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে-ই প্রতিষ্ঠা করা হয় জামিয়া ইসলামিয়া দারুস্সালাম ভাটপাড়া”। অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ প্রতিষ্ঠান প্রধান দু‘টি দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে থেকে তালীম ও তাবলীগের দায়িত্ব পালন ছাড়াও কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ ও যোগ্য মানব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে নিম্ন উল্লেখিত কর্মসূচী বাস্তবায়নে সদা সচেষ্ট।

  • প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাঝে আল্লাহতা‘আলার হুকুম ও রাসূল সাঃ এর আদর্শ বাস্তবায়ন করা।
  • ঐশিশ্রুত কোরআন হিফজ করার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা ও আদর্শে সমাজে ধর্মীয় ভাবধারা সৃষ্টি করা।
  • ইসলামী ও জাগতিক শিক্ষার সু-সমন্বয়ে আগামী প্রজন্ম গড়ে তোলা।
  • ইহকালীন ও পরকালীন সাফল্য অর্জনে শিক্ষার্থীদেরকে উপযোগী দক্ষ, যোগ্য, আদর্শ চরিত্র গঠন ও স্বদেশানুরাগী করে গড়ে তোলা।
  • এতিম ও অসহায় শিশু-কিশোরদেরকে আশ্রয় দান করতঃ উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দান করা।
  • সর্বক্ষেত্রে হালাল রিযিক দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করার জন্য কর্মোপযোগী মানুষ তৈরী করা।
  • বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাকুল-মাদারিস) এর শিক্ষা কার্যক্রম অনুসরন করা।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করার ফলে অতি অল্প সময়ে এ প্রতিষ্ঠানটির সুনাম সুখ্যাতি বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। সার্বিক দিক বিবেচনায় এ প্রতিষ্ঠানটি উলামায়ে কেরাম নিকট ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। অপর দিকে সুদক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলীর আ্ন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় পরীক্ষাসমূহে বিভিন্ন মারহালায় মেধা তালিকায় সম্মানজক স্থান অধিকার করে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জন করে আসছে।

সমাজের হতদরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে ইলমে নববী অন্বেষণে উঠে আসা তালিবে ইলমরাও যাতে বঞ্চিত না হয় সে দিকে লক্ষ করেই এ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার ব্যয় সমাজের বিত্তবান ও সুহৃদ ভাইবোনদের প্রদত্ত যাকাত ফিতরা মান্নত কুরবানীর চামড়া ও সাধারণ দান ইত্যাদি দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে।

রমজানের ছটি ঐচ্ছিক ৩০ দিন, ঈদুল ফিতরের ছটি ১০ দিন, ঈদুল আজহা ছটি ১০দিন । প্রথম সাময়িক পরিক্ষার ছটি ৪ দিন, দ্বিতীয় সাময়িক পরিক্ষার ছটি ৪ দিন, মাহফিল ছটি ৪ দিন, শহিদ মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রু য়ারি ১ দিন , স্বাধীনতা দিবসের ১ দিন , ১২ রবিউল আওয়াল ১ দিন, ১০ মহরম ১ দিন ।